আমার কোমরে প্রচন্ড ব্যথা করে, বেশীক্ষণ দাড়িয়ে থাকতে পারি না
অনেক সময় আমাদের কাছে রোগী কোমরে প্রচণ্ড ব্যাথা নিয়ে আসেন, এমন ও দেখা যায় রোগী ব্যাথায় কাতরাচ্ছেন এবং হুইল চেয়ারে করে আসছেন। অন্যান্য লক্ষনঃ এ ব্যাথার সাথে সাথে সাধারনত এ সকল ক্ষেত্রে নিচের এক বা একাধিক লক্ষনও পাওয়া যায়, যেমনঃ - প্রথমদিকে এ ব্যাথা কম থাকে যা পরবর্তীতে বেড়ে যায় - ব্যাথা পায়ের দিকে নামতে পারে আবার তা পা থেক কোমরের দিকে আসে - চিত হয়ে গুমালে ব্যাথা কমে যায় এবং নড়াচড়া করার ক্ষেত্রে বেড়ে যায়। - পা ভারী ও অবশ হয়ে যায় অর পায়ে শক্তি কমে আসে। - নামাজ পড়া ও হাঁটাহাঁটি করেলে ব্যাথা বেড়ে যায়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাঃ রোগী ডাক্তারের কাছে যাবার পর প্রাথমিক ভাবে ব্যথার কারন বুঝার জন্য কিছু প্রশ্ন করে থাকেন, যেমনঃ - বর্তমানে কোন রোগের চিকিৎসা নিচ্ছেন কিনা - ব্যথার সাথে সম্পৃক্ত বিভিন্ন লক্ষণ ও রোগ/বিষয় সম্পর্কে জেনে নিবেন, যেমনঃ o জ্বর আছে কিনা o নড়াচড়া (movement) –এ কি কি সমস্যা হয় o ডায়াবেটিক আছে কিনা o অন্যান্য কি কি রোগ বর্তমানে আছে বা o কি কি রোগের ঔষধ বা চিকিৎসা নিচ্ছেন - রোগীর বয়স একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় (বয়স ৪০ পার হবার পর হতে বিভিন্ন সমস্যা তৈরি হতে থাকে) - রোগী পুরুষ বা নারী (মহিলাদের ক্যালসিয়াম এর অভাব হাড়ের সমস্যার একটি বড় কারন) - গত কিছু দিনের হিস্ট্রি (history) জেনে নিবেন - পূর্ববর্তী কোন রোগের রিপোর্ট যদি থাকে তা ভালো - অন্যান্য প্রয়োজনীয় বিষয় চলুন জেনে নেই কি কি কারনে কোমরে ব্যথা হতে পারেঃ - লাম্বার স্পনডোলাইসিসঃ আমাদের কোমরে ৫টি বাঁকা হাড় রয়েছে। বয়সের সাথে সাথে বা বংশগত কারনে কোমরের এই হাড়ে ক্ষয় তৈরি হলে এ সমস্যা হয়, ফলে রোগী কোমরে ব্যথা অনুভব হবে। - পিএলআইডিঃ মেরুদণ্ডের হাড়ের মাঝে যে নরম ডিস্ক থাকে, তা তার স্থান হতে সরে গেলে সেখানে অবস্থিত স্নায়ুর উপর চাপ পড়ে ফলে কোমরে ব্যথা হয়। - শারীরিক কোন ধরনের কছরত করতে গিয়ে কোমরের পেশীতে টান বা হাড়ের ক্ষতি হতে পারে - দীর্ঘদিন ক্যান্সার এর চিকিৎসায় ধীরে ধীরে হাড়ে ক্ষয় তৈরি হয়। - অন্যান্য কারন পরীক্ষাঃ অনেক রোগী রয়েছেন যারা মনে করেন ডাক্তারগণ অযথা টেস্ট দিয়ে থাকেন, কিন্তু একবার ভাবুন সঠিক ভাবে রোগ নির্ণয় না করে যদি চিকিৎসা দেয়া হয়, তবে ভালোর চেয়ে মন্দ হতে পারে, এতে রোগীই কস্ট পাবেন।কারন একটি লক্ষন কোন একটি নির্দিষ্ট রোগের জন্য হয় না। যেমন জ্বর দেখে আপনি দেখে বা শুনে কখনই নিশ্চিত হয়ে বলতে পারবেন না যে এটা কি কারনে হয়েছে। জ্বর টাইফয়েড, ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, রক্তের ইনফেকশন, ভাইরাল ফিভার, প্রস্রাবের নালীতে ইনফেকশন, শরীরের কোথাও প্রদাহ বা অন্য কারনেও হতে পারে। টেস্ট ছাড়া নিশ্চিত হয়ে বলা মুশকিল। ভুল চিকিৎসা ভালোর চেয়ে মন্দ বয়ে আনতে পারে। যেহেতু বিভিন্ন কারনে কোমর ব্যথা হতে পারে, তাই সঠিক রোগ নির্ণয়ের জন্য লক্ষন বিবেচনা করে ডাক্তার কিছু টেস্ট করতে বলতে পারেন, যেমনঃ - ফরোয়ার্ড বন্ডিং পরীক্ষা - ব্যাকওয়ার্ড বন্ডিং পরীক্ষা - কোমরের এক্স-রে - রক্ত পরীক্ষাঃ o ক্যালসিয়াম পরীক্ষা o ইউরিক এসিড o বাতের পরীক্ষা - এইচএলএবি-২৭ টেস্ট (ক্রনিক ব্যাক পেইন এর ক্ষেত্রে) - এমআরআই প্রাথমিক পরামর্শ: টেস্টের রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত প্রাথমিক ভাবে ডাক্তার কিছু পরামর্শ দিতে পারেন, যেমনঃ - শক্ত ও সমান বিছানায় ঘুমাতে হবে, নরম ফোমের বিছানায় গুমানো যাবে না। - গরম সেঁক দেয়া - হালকা মেসাজ - শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে - ঝুকে বা মেরুদণ্ড বাঁকা করে কোন কাজ করা যাবে না - নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করতে হবে। - কোমর বন্ধনী ব্যবহার করা যাতে কোমরে বেশী চাপ না পড়ে প্রাথমিক ঔষধঃ টেস্টের রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত প্রাথমিক ভাবে ডাক্তার কিছু ঔষধ দিতে পারেন, যেমনঃ - ব্যাথার প্রকোপ অনুযায়ী ব্যাথানাশক ঔষধ - ক্যালসিয়াম টেবলেট - অন্যান্য ঔষধ চিকিৎসাঃ টেস্ট পর্যালোচনা করে চিকিৎসক প্রয়োজনীয় ঔষধ ও পরামর্শ দিবেন। যদি ঔষধের মাধ্যমে রোগের সমাধান হয় তবে ভালো, অন্যথায় রোগের ধরন অনুযায়ী সার্জারির প্রয়োজন হবে। সমস্যাটি যদি উক্ত ডাক্তারের আয়ত্তাধীন না হয় (যেমনঃ ক্যান্সারের রোগী হলে প্রয়োজন বোধে রোগীকে ক্যান্সারের ডাক্তারের নিকট পাঠাতে পারেন ) তবে তিনি সমস্যা অনুযায়ী অন্য ডাক্তারের নিকট রোগীকে পাঠিয়ে দিবেন।